উইন্ডোজ ফোন [পর্ব-৩] :: উইন্ডোজ ফোন কি আপনার নেয়া উচিত? আগে জেনে নিন বাজে কয়েকটি দিক!
এই টিউনটি পুরোনো। বর্তমানে Windows Phone 8.1 এ নিচের প্রায় সকল সুবিধা যোগ করা হয়েছে।
গত টিউনগুলিতে এবং বিভিন্ন জায়গায় উইন্ডোজ ফোন নিয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এটা অবশ্যই অস্বাভাবিক কিছু নয়। অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে উইন্ডোজ ফোন কেনার আগে এটির সমন্ধে বিস্তর জানা উচিত। টাকা পেলেন আর কিনে আনলেন তাহলে তো অভিযোগ থাকবেই। সবারই উচিত তাদের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করতে পারবেন এমন ফোন কেনা। আপনার বাবাকে যদি আপনি Samsung Gallaxy S4 দেন তাহলে ফোনটির সকল সুবিধা থাকলেও আপনার বাবা সেটির দ্বারা তাঁর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না বা তাঁর কাছে সেটি ঝামেলা মনে হবে। এক্ষেত্রে তাঁর জন্য Nokia 1100 টাই বেটার ! তাই আজকের টিউনের মূল বিষয় উইন্ডোজ ফোন নেয়া আপনার উচিত কিনা।
টিভিতে এবং বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেম সম্বলিত নোকিয়া লুমিয়া কিংবা HTC সহ অনান্য ব্রান্ডের ফোন কিনছেন। উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেম সম্বলিত ফোনগুলির তুলনা হয়না। দেখতে যেমন দারুন আকর্ষণীয় ব্যবহার করতেও তেমন মজা। কিন্তু এই মজা সবার জন্য না সবাই এই মজা উপভোগ করতে পারবেন না।
কয়েকটি কারণ যেগুলি উইন্ডোজ ফোন কেনার আগে আপনার জানা উচিতঃ
১) ফাইল ম্যানেজারঃ
অন্যান্য মোবাইল ফোন অপারেটিং সিস্টেমগুলির সাথে তুলনা করলে এটিই উইন্ডোজ ফোনের সবচেয়ে বহুত আলোচিত একটি বিষয়। হ্যা, উইন্ডোজ ফোনে কোন ফাইল ম্যানেজার নেই। এটিই উইন্ডোজ ফোনের সবচেয়ে বাজে একটি ব্যাপার আপনার কাছে মনে হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি অ্যান্ড্রয়েড থেকে উইন্ডোজ ফোনে আসেন। অনেকেই আছেন যারা তাদের ফোনে ফাইল ম্যানেজার না থাকার কথা ভাবতেই পারেন না। যদিও উইন্ডোজ ফোনে ফাইল ম্যানেজারের কোন প্রয়োজন হয়না। এবং উইন্ডোজ ফোনে ফাইল ম্যানেজার না থাকার সপক্ষে অনেক যুক্তিও রয়েছে।
২) নোটিফিকেশন সেন্টারঃ
নোটিফিকেশন সেন্টারের সাহায্যে মূলত ফোনের বিভিন্ন অ্যাপ কিংবা কমিউনিকেশন এর আপডেট/ষ্ট্যাটাস এক জায়গাতেই পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন, ব্লাকবেরি ইত্যাদিতে নোটিফিকেশন সেন্টার থাকলেও উইন্ডোজ ফোনে এখনও তা অবর্তমান। যদিও উইন্ডোজ ফোনের লাইভ টাইল এর মাধ্যমে নোটিফিকেশন দেখা যাওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তবে নোটিফিকেশন সেন্টার উইন্ডোজ ফোন ৮.১ এ আসতে পারে বলে জানা গেছে।
৩) ভলিউম কন্ট্রোলঃ
উইন্ডোজ ফোনে ভলিউম কন্ট্রোল অল-ইন-ওয়ান। এর ফলে পুরো সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি একটিমাত্র ভলিউম কন্ট্রোল। অর্থাৎ আপনি গান শোনার সময় অল্প সাউন্ড দিয়ে রাখলেন কিন্তু যখন কল আসবে তখন ওই কম সাউন্ডেই রিংটোন বাজবে। গেম খেলার সময়ও একই ভলিউমে সাউন্ড হবে। ফলে যদি রিংটোন জোরে বাজাতে চান কিংবা গেমের ভলিউম বাড়াতে চান তাহলে আপনাকে আবারও বাটন টিপে ভলিউম বাড়িয়ে নিতে হবে। যদিও অনেকের ক্ষেত্রে এটি একটি সুবিধা কিন্তু আপনার জন্য অসুবিধাও হতে পারে।
৪) প্রফাইলঃ
আশা করি জীবনে এপর্যন্ত যতগুলি ফোন ব্যবহার করেছেন সবগুলিতেই প্রফাইল রয়েছে। অর্থাৎ সবসময়ের জন্য "General", মিটিং এ গেলে "Silent", বাইরে বেরুলে "Outdoor", ঘরের ভিতর থাকলে "Indoor" ইত্যাদি। বর্তমানে উইন্ডোজ ফোনে শুধু ভলিউম বাটন টিপে ফোন ভাইব্রেট করার অপশন রয়েছে। তবে আমার নিজের কখনো এত্তগুলি প্রফাইলের কখনো দরকার হয়নি। ফোন ভাইব্রেট করা গেলেই হল। যদিও একেকজনের চাহিদা একেকরকম।
৫) ব্রাউজারঃ
উইন্ডোজ ফোনে Google Chrome, Firefox ও Opera ব্রাউজার নেই। শুধুমাত্র Internet Explorer 10 এবং UC Browser রয়েছে এছাড়াও আরো কিছু ব্রাউজার রয়েছে তবে আমি শুধু জনপ্রিয় কয়েকটির কথা বললাম। Google Chrome না থাকার ফলে অনেকেই "ব্রাউজার সিংঙ্ক" সুবিধাটি পাবেননা। অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েট বা অন্যান্য ফোনে গুগল ক্রোম থাকার ফলে লগিন করলে সাথে সাথে কম্পিউটারে সেভ করা পাসওয়ার্ড, ব্রাউজিং হিস্টরি, বুকমার্ক ইত্যাদি সব চলে আসে। কিন্তু উইন্ডোজ ফোনে Google Chrome না থাকার ফলে যারা এই সুবিধার আসক্ত তাঁদের সমস্যা হতে পারে।
৬) ভিডিও কলঃ
উইনডোজ ফোন ৮ এর প্রায় প্রত্যেকটি ফোনই ৩জি সাপোর্টেট। তবে থ্রিজি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করলে আপনি এটি দিয়ে সরাসরি ভিডিও কল করতে পারবেন না। অর্থাৎ উইনডোজ ফোন ৮ নেটওয়ার্ক বেসড ভিডিও কল সমর্থন করেনা। তবে আপনি স্কাইপ কিংবা যেকোন থার্ডপার্টি অ্যাপ দিয়ে ভিডিও কল করতে পারবেন। থ্রিজি বাংলাদেশে অলরেডি এসে গেছে তবে আমার মনেহয়না সরাসরি ভিডিও কল মানুষ খুব একটা করে। ভিডিও কলের চার্জ অনেক বেশি এবং ভিডিও কোয়ালিটিও তেমন ভাল নয়। তাই স্কাইপ ব্যবহার করে কল করাই অনেক সাশ্রয়ী। এই সুবিধাটি যদি কারো খুব প্রয়োজন হয় তাহলে উইন্ডোজ ফোন না নেয়াই উচিত।
৭) অ্যাপ স্টোরঃ
উইন্ডোজ ফোনের এটাও একটা আলোচিত দিক। হ্যা আইফোন কিংবা অ্যান্ড্রয়েট এর থেকে তুলনামূলক কম অ্যাপ পাবেন উইন্ডোজ ফোনে। তবে জনপ্রিয় এবং নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল অ্যাপই রয়েছে। বর্তমানে উইন্ডোজ ফোন স্টোরে ১৬০,০০০ এরও বেশি অ্যাপ রয়েছে। আমরা সাধারণত কতগুলি অ্যাপ ব্যবহার করি? ৩০ টা? ৫০ টা? আচ্ছা ধরলাম ১০০ টা?
আপাতত এই কয়েকটি অসুবিধাই আমার সেরা মনে হয়েছে। আসলে সবকিছুই আপনার চাহিদা এবং ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। সত্যি বলতে উপরের যে কয়েকটি অসুবিধার কথা বর্ণনা করা হয়েছে অনেকেই কাছেই এগুলি কোন ব্যপারই না আবার অনেকেই কাছে এগুলিই অনেক ব্যাপার।
এই টিউনটি দেখে হয়ত অনেকেই উইন্ডোজ ফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। কিন্তু আমি বলব আসলে আপনি বিরাট মিস করবেন। আমি এই টিউনে শুধু কয়েকটা সনামধন্য অসুবিধা সমন্ধে আলোচনা করেছি কিন্তু উইন্ডোজ ফোনের সুবিধা এবং আকর্ষনীয় ফিচার নিয়ে লিখিনি। পরবর্তী টিউনগুলিতে অবশ্যই লিখব উইন্ডোজ ফোনে সুযোগ সুবিধা নিয়ে।
আমার পরামর্শ হিসেবে আপনি যদি উইন্ডোজ ফোনে সুইচ করতে চান তাহলে অবশ্যই উপরের বিষয়গুলির সাথে "আপাতত" মানিয়ে নিতে পারলেই শুধুমাত্র আসুন। খামখা উইন্ডোজ ফোন কিনে পরে ব্যবহার করতে না পারার অভিযোগে এটিকে দুর্নাম করার মানে দেখিনা। অনেকেই আছেন না বুঝে উইন্ডোজ ফোন কিনে দুইদিন মাথা আচড়িয়ে বিক্রি করার জন্য প্রাণপণ টেস্টা শুরু করেন। বিশেষ করে তাদের জন্যই মূলত এই টিউনটি।
প্রতিটি অপারেটিং সিস্টেম এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলির জন্যই একেকটার সাথে অন্যটার তুলনা হয়না। iPhone আইফোন এর জায়গায়, Android অ্যান্ড্রয়েড এর জায়গায় আর Windows Phone উইন্ডোজ ফোন এর জায়গায়।