নজরকাড়া মোবাইল প্রযুক্তি ২০১৫

বছরটিকে মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিশোধনের একটি বছর বলছে ইনফরমেশন উইক। সেটা স্মার্টফোন, ট্যাব, পরিধানযোগ্য কোনো যন্ত্র বা কোনো সফটওয়্যারের ক্ষেত্র বিবেচনায় ধরে হিসেব করেছেন গবেষকেরা। ২০১৫ সালকে তাই বিশাল কোনো উদ্ভাবনের বছর না বলে এটিকে বাজারে থাকা পণ্যে ও প্রযুক্তির কিছুটা হালনাগাদের বছর বলা যেতে পারে।
এ বছরের প্রথমার্ধে নতুন দুটি পণ্য ঘিরে আলোচনা ছিল। একটি হচ্ছে অ্যাপল ওয়াচ ও আরেকটি মাইক্রোসফটরে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম। যদিও অনেকেই উইন্ডোজ ১০ কে প্রচলিত ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম বলে মনে করেছেন, তবে মাইক্রোসফটের লক্ষ্য ছিল তাদের সব ধরনের পণ্যে এই সফটওয়্যারটির সুবিধা দেওয়া। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার লক্ষ্য নিয়েও কাজ করেছে মাইক্রোসফট।
পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে অ্যাপলের প্রবেশের বিষয়টি এই শিল্পে রীতিমতো শোরগোল তোলে। অ্যাপলের স্মার্টওয়াচকে টেক্কা দিতে অ্যান্ড্রয়েড ওয়্যার চালিত স্মার্টওয়াচ নির্মাতারাও উঠে-পড়ে লাগে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাইক্রোসফটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন সত্য নাদেলা। তিনি মাইক্রোসফট থেকে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার বিভাগে ভালো করার প্রেরণা দেন। উইন্ডোজ ১০ এর পাশাপাশি মাইক্রোসফট সারফেস প্রো ৪ ট্যাব ও সারফেস বুক নামের হাইব্রিড পণ্য বাজারে নিয়ে আসে।
এ বছর আমাজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটিয়ে ইকো নামের একটি স্মার্টহোম যন্ত্র বাজারে আনে যা কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্মার্টহোমের ক্ষেত্রে এ বছরের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে উঠে আসে আমাজনের ইকো।
এ বছর স্মার্টফোনের বাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যের মোবাইল ফোন সেটের পাশাপাশি ভারচুয়াল রিয়েলিটি পণ্য বাজারে ছাড়ে। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস ৬ ও গিয়ার ভিআর নামের এই দুটি পণ্য এ বছর মোবাইল প্রযুক্তিপণ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
এ বছরের আরেকটি আলোচিত বিষয় মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেম। এই ক্ষেত্রটিতে গুগলের অ্যান্ড্রয়েডের আধিপত্য। এ বছর অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ বা মার্সম্যালো নামের সংস্করণ উন্মুক্ত করে নজর কেড়েছে গুগল।
এ বছর মটোরোলা মটো ৩৬০ স্মার্টওয়াচ অনেকের মন কেড়েছে। গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম প্ল্যাটফর্মের এই স্মার্টওয়াচটি ধ্রুপদী ওয়াচ হিসেবে এ বছরের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
ইন্টারনেট অব থিংস বা সব পণ্যের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়েছে এ বছর। এ ক্ষেত্রে স্মার্ট হোম বা ঘরের প্রতিটি দরকারি পণ্যের সঙ্গে ইন্টারনেট যুক্ত করার সুবিধা দিতে শুরু করেছে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে রিং ডোরবেল নামের একটি প্রযুক্তিপণ্য অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে বাজারে আসা আইফোন ৬ এ ও ৬ এস প্লাসের কথা না বললেই নয়। স্মার্টফোনের দুনিয়ায় শোরগোল তোলা অ্যাপলের এই দুটি ফোন ২০১৪ সালে বাজারে আসা আইফোনের মতো হলেও এর বেশ কিছু ফিচার স্মার্টফোনপ্রেমীদের নজর কাড়ে। এর থ্রিডি টাচ ও লাইভ ফটোজ ফিচার দুটি পছন্দ করেন স্মার্টফোনপ্রেমীরা। বাজারে আসার প্রথম সপ্তাহ শেষে এক কোটি ৩০ লাখ ইউনিট আইফোন বিক্রি হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বের কয়েকটি দেশে আইফোন বিক্রি শুরু করে অ্যাপল। ৯ সেপ্টেম্বর এর ঘোষণা দিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আগাম ফরমায়েশ নেওয়া শুরু হয়।
নতুন আইফোন সম্পর্কে অ্যাপল দাবি করে, এটি ‘বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত স্মার্টফোন।’ এই স্মার্টফোনে রয়েছে অ্যাপলের আইওএস ৯ অপারেটিং সিস্টেমে। ফোরকে মানের ভিডিও ধারণ করার জন্য এই ফোনের পেছনে উন্নত আই-সাইট ক্যামেরা যুক্ত করেছে অ্যাপল। ফোরকে ডিসপ্লেতে রেজুলেশন থাকে ৩৮৪০ বাই ২১৬০ যাতে পিক্সেল ঘনত্ব হয় ইঞ্চি প্রতি ৮০৬। গত বছরে বাজারে আসা আইফোন ৬ এ আট মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা থাকলেও নতুন আইফোনের পেছনে ১২ মেগাপিক্সেল ও সামনে পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা যুক্ত হয়েছে। লাইভ ফটোজ নামের নতুন একটি ফিচারও যুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আইওএস ৯ এ ফিচার হিসেবে রয়েছে ডিজিটাল সহকারী সিরির উন্নত সংস্করণ। এমনকি এটি ব্যাটারির চার্জ বাড়তি এক ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচাতে পারে।