ডিজিটাল ক্যামেরা কি? প্রকারভেদসহ কি ধরনের এবং কত মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ব্যবহার করবেন! ক্যামেরা ক্রয় ইচ্ছুক

ডিজিটাল ক্যামেরা কি?
ডিজিটাল ক্যামেরা বলতে এমন ক্যামেরা বোঝায়, যেগুলোতে সনাতনী ফিল্ম ব্যবহৃত হয় না, বরং তার বদলে মেমরী চিপের মধ্যে ছবি ধারণ করে রাখার ব্যবস্থা থাকে। ডিজিটাল ক্যামেরার মান হিসাব করা হয় মেগা পিক্সেল দিয়ে যত বেশি মেগা পিক্সেল তত বেশি বড় ছবি ধারণ করার ক্ষমতা। প্রথমে দাম বেশি থাকলেও ফিল্ম ক্যামেরা থেকে অনেক দ্রুত দাম কমছে, এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফিল্ম লাগেনা এবং সাথে সাথে স্ক্রিনে ছবি দেখা যায় বলে এর চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। নিকট ভবিষ্যতে এটি ফিল্ম ক্যামেরাকে জাদুঘরের পণ্যে পরিণত করতে পারে।
মূলত ডিজিটাল ক্যামেরায় কোনো ফিল্ম ব্যবহার করা হয় না।এই জন্যে ডিজিটাল ক্যামেরাকে ফিল্মলেস ক্যামেরাও বলা হয়। ডিজিটাল ক্যামেরায় এক ধরনের অপটিক্যাল সেন্সর ব্যবহার করা হয়। অপটিক্যাল সেন্সর অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোক সংবেদনশীল ডায়োড (ফটোসাইট) দিয়ে তৈরি। এই অপটিক্যাল সেন্সরের কাজ হল আমরা যেই বস্তুটির তুলব সেই বস্তু থেকে আসা আলোকে ইলেক্ট্রনিক চার্জে  রূপান্তরিত করা।

ডিজিটাল ক্যামেরার মেগাপিক্সেল সম্পর্কে ধারনা

এবার আলোচনা শুরু হবে ক্যামেরার মেগাপিক্সেল নিয়ে। প্রথমে আপনাকে একটি প্রশ্ন করি ও অনুমান করি আপনার একটি ক্যামেরা আছে যেটি ১৫ মেগাপিক্সেল এর আর আপনার বন্ধুর একটি ক্যামেরা আছে ৮ মেগাপিক্সেল এর। এখন কার ক্যামেরাতে ছবি ভালো আসবে? আপনার নাকি আপনার বন্ধুটির ক্যামেরায়।
উত্তর সাধারন ভাবে সবাই বলবে যে আপনার ক্যামেরাতে ছবি ভালো আসবে। আসলে কি তাই?

ডিজিটাল ক্যামেরার আসল রহস্য কি?

মেগাপিক্সেল এর মূলে রয়েছে পিক্সেল। পিক্সেল হচ্ছে ছোট এক বিন্দু তথ্য যা কিনা থাকে ডিজিটাল ছবি। এই রকম মিলিয়ন পিক্সেল মিলে তৈরি করে একটি ছবি। মেগা মানে হচ্ছে মিলিয়ন। যার অর্থ দারাচ্ছে ১০ মেগাপিক্সেলের একটা ছবি তে থাকে ১০ মিলিয়ন পিক্সেল। আর ১৪ মেগাপিক্সেল ছবিতে থাকে ১৪ মিলিয়ন পিক্সেল। মনে করুন, একটি ছবি আছে আয়তকার আকৃতির। এবং ছবিটি যদি লান্ডস্কেপ হয়, তাহলে, ১০ মেগাপিক্সেল এর ছবিটির সাইজ হবেঃ দৈর্ঘ্যঃ ২৫৯২ পিক্সেল এবং প্রস্থঃ ৩৮৮৮ পিক্সেল। ১৪ মেগাপিক্সেল এর ছবিটির সাইজ হবেঃ দৈর্ঘ্যঃ ৩১০৪ পিক্সেল এবং প্রস্থঃ ৪৬৭২ পিক্সেল। এখন আপনি দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ গুন করলেই পেয়ে যাবেন ছবিটি কত পিক্সেলের।২৫৯৮*৩৮৮৮=১০,০৭৭,৬৯৬ পিক্সেল = ১০ মেগাপিক্সেল ৩১০৪*৪৬৭২=১৪,৫০১,৮৮৮ পিক্সেল = ১৪.৫ মেগাপিক্সেল তো, এখন আপনার কি মনে হয়, যে পিক্সেল বেশি হলেই ছবি ভাল আসে?
হ্যা, আপনি যদি ছবি বড় করতে চান তাহলে বেশি পিক্সেল এর ক্যামেরা হলে ভালো। এখন দেখি, আপনি কতটা বড় ছবি তুলতে চান?
মেগাপিক্সেল প্রিন্ট সাইজ (ইঞ্চি)
2.0 = 4 x 6 [standard]
3.0 =  5 x 7
4.0 =  8 x 10
5.0 =  8 x 12
6.0 =  9 x 12
8.0 =  11 x 14
10.0 = 12 x 16
12.0 = 16 x 20
14.0 = 18 x 24
এখন আপনি যদি 4 x 6 ইঞ্চি আকারে ছবি প্রিন্ট করতে চান তাহলে ২ মেগাপিক্সেল আর ১৪ মেগাপিক্সেল একি এ পিকাচার কুয়ালিটি দেবে। পিক্সেল বেশি হলেও ও ছবির কুয়ালিটি সমান থাকবে।
এখন আপনি যদি 4 x 6 ইঞ্চি আকারে ছবি প্রিন্ট করতে চান তাহলে ২ মেগাপিক্সেল আর ১৪ মেগাপিক্সেল একি এ পিকাচার কুয়ালিটি দেবে। পিক্সেল বেশি হলেও ও ছবির কুয়ালিটি সমান থাকেবে। এইখানে কিছু কথা রয়ে যায় আর সেটা হচ্ছে এই পিক্সেল কি ডি এস এল আর ক্যামেরার নাকি পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার? ডি এস এল আর এবং পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার পিক্সেল একসাথে তুলনা করা যাবে না। এর প্রধান কারন হচ্ছে যে, পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরার সেন্সর ডি এস এল আরের সেন্সর থেকে অনেক ছোট থাকে(এইটা প্রায় ২৫ গুন)। যার কারনে পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরার পিক্সেল আকারে ছোট থাকে। অপরদিকে ডি এস এল আরের সেন্সর আকারে বড় হওয়ার দরুন অনেক বেশি ফোটন গ্রহন করতে পারে। পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার ছোট পিক্সেল এর কারনে এইটা অনেক কম আই এস ও () তে ছবি তুলে যার কারনে ছবি তে নইএস বেশি থাকে। এই ছোট সেন্সর এর জন্য পয়েন্ট অ্যান্ড শুট এর ইমেজ কুয়ালিটি ডি এস এল আরের চেয়ে খারাপ হয়ে যাই।

কোন ধরনের ক্যামেরা আপনার বিশেষ প্রয়োজন? এবং ক্যামেরার প্রকারভেদ

আজকের বাজারে বিভিন্ন ডিজিটাল ক্যামেরায় ভরপুর, প্রথমেই সবার, জিজ্ঞাসা কোন ক্যামেরা কিনবো? যে প্রশ্নের উত্তর সাধারণত, কত টাকা আপনি ব্যয় করতে চান এবং কি ধরনের ফটোগ্রাফি করতে চান? যেমন, ন্যাচার, ওয়েডিং, পোর্টেট, ফ্যামিলি ফটগ্রাফী ইত্যাদি।
সাধারনত বাজারে ৩ ধরনের ক্যামেরা পাওয়া যায়
  •  বেসিক পয়েন্ট অ্যান্ড শুট
  • কম্পেক্ট
  •  ডি এস এল আর।

পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা

এই ৩ ধরেনের ক্যামেরার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা। এই ক্যামেরা আমরা অনেকেই ব্যবহার করি এবং এইটা ব্যবহার করতে আপনাকে খুব বেশি কিছু জানতে হবে না। ক্যামেরা হাতে নিন, অন করুন, সাবজেক্ট কে ফুকাস করুন এবং ক্লিক করুন। ব্যাস, আপনার ছবি ওঠে গেলো।

সুবিধা

  •   অল্প দামেই পাচ্ছেন খুব সহজ ভাবে।
  • বেশ হাল্কা এবং খুব সহজেই বহন করা যায়।
  • অটুমেটিক ফিচার গুল খুব সহজেই আপনার ছবি তুলতে সাহায্য করে।

অসুবিধা

  • ইচ্ছে করলেই ক্যামেরার লেন্স পরিবর্তন করতে পারবেন না।
    অনেক সময় ক্যামেরার অপারেশন স্লো অপারেশন এর জন্য ছবি কিছুটা ব্লার আসতে পারে।
  • ভিউ ফাইন্ডার না থাকার জন্য দিনের বেলায় ছবি তুলতে অসুবিধা হতে পারে। কারন অতি উজ্জ্বল আলোয় LCD Display তে অনেক সময় ছবির ওরিজিনাল কালার বুঝা যায় না।
  • LCD Display যখন কোন ছবি শো করে তখন তার সাথে কিছু এডিশনাল কালার এড করে ছবির উজ্জলতা বাড়ানোর জন্য, যাতে করে ওরিজিনাল ছবির কালার বুঝতে সমস্যা হয়।
  • সর্বোপরি, পয়েন্ট এন্ড শুট কামেরা আপনার প্রতিদিনের ছবি তুলার জন্য ভালো। কিন্তু আপনি যদি প্রোফেসনাল ছবি তুলতে চান কিংবা আপনার হবি যদি হয় প্রোফেসনাল ছবি তুলা তাহলে এই কামেয়া আপনার জন্য না।

কম্পেক্ট ক্যামেরা

কম্পেক্ট ক্যামেরা অনেকটা পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরার মতই। কম্পেক্ট ক্যামেরা পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা থেকে কিছুটা আকারে বড় হয় এবং এই গুলোর যুম ও এক্সপোজার পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা থেকে বেশি।

সুবিধা

  • ডি এস এল আর ক্যামেরার নিচের সারির দাম ক্যামেরার দাম থেকে অল্প দামেই পাওয়া যায়।
  • ক্যামেরা লেন্স গুলো মোটামুটি যুম সম্পন্ন, যার কারনে আপনি কাছ থেকে দূর পর্যন্ত ছবি তুলতে পারবেন।
  • অনেক ক্যামেরাতেই ভিউ ফাইন্ডার থাকে, যার কারনে উজ্জ্বল আলোতে ও ছবি তুলার সময় দেখতে পারবেন।
  • অনেক ফিচার ম্যানুয়ালী কন্ট্রোল করা যায়। যা কিনা আপনাকে অনেকটা ডি এস এল আর এর স্বাদ দিবে।
  • অনেক গুলোতে আবার এডিশনাল লেন্স এড করার অপশন আছে।

অসুবিধা

  • অনেকটাই পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরার মতই।
  • এই ক্যামেরাতে ভিও ফাইন্ডার থাকলেও সেইটা মূলত একটা ছোট LCD Display, ওরিজিনাল ভিও ফাইন্ডার না।

ডি এস এল আর ক্যামেরা

ডি এস এল আর এবং উপরের বর্ণিত দুটি ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে এই ক্যামেরাতে আপনি আপনার ছবি তুলার প্রয়োজন মত লেন্স পরিবর্তন করতে পারবেন, অনেক বেশি ফাস্টার। এবং আপনি সেই ইমেজটিই দেখতে পাবেন যেইটা কিনা আপনার ক্যামেরা দেখছে। কারন ক্যামেরার ভিও ফাইন্ডার আপনাকে একি লেন্সের রিফ্লেকশন দেখাই।

সুবিধা

  •  ডি এস এল আর ক্যামেরার সুবিধা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
  • ক্যামেরা লেন্স আপনার প্রয়োজন মত পরিবর্তন করতে পারবেন। যখন যেই ধরনের ছবি তুলতে চান সেই ধরনের লেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন, ম্যাক্রো ছবি তুলতে ম্যাক্রো লেন্স, দুরের ছবি তুলতে টেলিফটো ইত্যাদি।
  • ক্যামেরা অনেক বেশি ফাস্টার ছবি তুলে। ছবি তুলার মাঝে কোন প্রিপারেশন টাইম নেই না। আপনি রেডি তো ক্যামেরা ও রেডি।
  • আপনার প্রয়োজনে এক্সটারনাল ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারবেন। যেইটা কিনা আপনার ক্যামেরার ফ্ল্যাশ থেকে উজ্জ্বল আলো দেবে আপনার প্রয়োজন মতে।
  • ম্যানুয়ালী এক্সপোজার এর জন্য আপনি আপনার ছবি কেমন হবে তা ঠিক করতে পারবেন। যেমন, শারটার স্পীড কত হবে, আই এসও কত, আপেরচার কত ইত্যাদি।

অসুবিধা

  • এই ক্যামেরা দাম উপরের দুটি থেকে অনেক বেশি।
  • ভালো ছবি তুলতে হলে আপনাকে ফটোগ্রাফী সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে।
  • ক্যামেরা ও তার আনুসাঙ্গিক সবকিছু বহন করতে আলাদা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।

Find us on Facebook

Categories