দখল সংক্রান্ত:


জমি দখল কি?
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এক খন্ড জমি দখলে রাখার জন্য সব সময়ই উদগ্রীব থাকে ৷ জমি দখলে রাখার পদ্ধতিগুলি হলো-
উত্তরাধিকার সূত্রে
ক্রয় সূত্রে
দান সূত্রে
সরকার কর্তৃক প্রদত্ত খাস জমি পাবার পর
লীজ গ্রহণের মাধ্যমে
জবর দখলের মাধ্যমে
বর্গা চাষের জন্যও জমি দখলে রাখতে পারে
অধিকার:
জমি দখলে রাখার অধিকার৷
উপরোক্ত যে কোনো পদ্ধতিতেই কোনো মানুষ জমি পেয়ে থাকুক না কেন জমি দখলে রাখার অধিকার সকল মানুষেরই রয়েছে৷ এমন কি ঐ জমিতে যদি তার মালিকানা নাও থাকে তথাপিও সেই জমি দখলে রাখতে পারবে৷

লঙ্ঘন:
দখলে থাকা জমি হতে বেদখল করা৷
কোনো মানুষকে তার দখলকৃত জমি থেকে উপযুক্ত কারণ না দেখিয়ে তাকে বেদখল করা যাবে না৷ যদি কোনো ব্যক্তিকে হঠাত্‍ করেই কোনো জমি হতে বেদখল করা হয় তাহলে তা একজন মানুষের জমি দখলে রাখার অধিকার লংঘন বলে গণ্য হবে৷ এমনকি কোনো ব্যক্তির কোনো জমিতে যদি তার মালিকানা নাও থাকে তথাপিও ঐ ব্যক্তিকে কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে ঐ জমি হতে তাকে বেদখল করলে তা অধিকার লংঘন হবে বলে গন্য হবে৷
কেস স্টাডি: রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার সরলিয়া গ্রামের মোঃ আব্দুর রহিম একজন গরীব কৃষক৷ পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ১০ (দশ) শতাংশ জমি সে দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদ করে আসছিল কিন্তু হঠাত্‍ একদিন তার এক প্রতিবেশী সম্পর্কে চাচাত ভাই মোঃ কালাম মিয়া আব্দুর রহিমকে জোর পূর্বক ভাবে বেদখল করে ঐ জমিটিতে চাষাবাদ করতে বাধা দিয়ে বলে যে কালাম মিয়া ঐ জমিটি মোঃ আব্দুর রহিমের বড় ভাই মোঃ জাহিদুল ইসলামের নিকট হতে ক্রয় করেছে৷ আব্দুর রহিমের আপন বড় ভাই মোঃ জাহিদুল ইসলাম গত দুই বছর হলো নিখোঁজ রয়েছে এই সুযোগের আশ্রয় গ্রহণ করে পরধন লোভী কালাম মিয়া জমি ক্রয়ের মিথ্যা কাহিনী তৈরী করে রহিমকে তার জমি হতে বেদখল করে নিজে ঐ জমিতে চাষাবাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ রহিম মিয়া গরীব এবং জনবলে দূর্বল বিধায় প্রতারক কালামকে জমিতে প্রবেশ ও চাষাবাদ করা হতে বিরত রাখতে পারছে না৷ বাস্তবে কালাম মিয়া রহিম কিংবা তার ভাইদের নিকট হতে অথবা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের নিকট হতে কখনও কোনো জমি ক্রয় করেনি৷ এমতাবস্থায় অসহায় গরীব কৃষক আব্দুর রহিম একেবারে সর্বশান্ত হয়ে পথে বসতে শুরু করেছে৷ এখন গরীব কৃষক মোঃ আব্দুর রহিম জানতে চায় যে তার জমি ফেরত পাবার জন্য কোনো প্রতিকার আছে কি? যদি থাকে তাহলে তাকে কোথায় যেতে হবে? এবং কি পদ্ধতিতে তাকে অগ্রসর হতে হবে
এডভোকেট মোঃ এস.এম.রেজাউল বারী
রিসার্চ এসোসিয়েট (আইন ও মানবাধিকার)
ডি.নেট. বাংলাদেশ৷
জমি হতে বেদখল হলে প্রতিকার:
গ্রাম্য প্রধান/মাতব্বর মুরুব্বীদের শরনাপন্ন হওয়া।
আদালতের শরনাপন্ন হওয়া।
গ্রাম্য প্রধান/মাতব্বর মুরুব্বীর শরনাপন্নের মাধ্যমে:
যদি কোনো ব্যক্তি তার দখলকৃত জমি হতে কোনো সময় হঠাত্‍ করে বেদখল হয়ে যায় কিংবা তাকে জোড়পূর্বক বেদখল করা হয় তাহলে এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি প্রথমে প্রতিকার পাবার জন্য তথা জমিটিতে পুনরায় দখল ফিরে পাবার জন্য গ্রাম্য প্রধান তথা মাতব্বর মুরুব্বীদেরকে জানাতে পারেন। জমি হতে বেদখল হওয়ার বিষয়ে মাতব্বরগণ উভয় পক্ষকে ডেকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে পারবেন।
আদালতের শরনাপন্ন হয়ে:
যদি জমি হতে বেদখল হওয়া ব্যক্তিটি মনে করেন যে গ্রাম্য প্রধান/মাতব্বর ব্যক্তিগণের নিকট শরনাপন্ন হয়ে তিনি উপযুক্ত প্রতিকার পাবেন না মর্মে আশংকা করেন কিংবা গ্রাম্য প্রধান/মাতব্বর ব্যক্তিগণের নিকট শরনাপন্ন হওয়ার পরও কোনো প্রতিকার না পান তাহলে সেক্ষেত্রে জমি হতে বেদখল হওয়া ব্যক্তিটি সরাসরি আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন।
কোন আদালতে?
ফৌজদারী আদালত
অথবা দেওয়ানী আদালত
ফৌজদারী আদালতে: (১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারা মতে) যদি কোনো ব্যক্তি তার দখলকৃত জমি হতে (মালিকানা থাক বা না থাক) হঠাত্‍ করে বেদখল হয়ে যান কিংবা কোনো ব্যক্তি তাকে জোড় পূর্বক ভাবে বেদখল করে তাহলে জমি হতে বেদখল হওয়ার পর তাকে ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে হবে। এ ধরনের মামলা সাধারণত অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
কতদিনের মধ্যে?
বেদখল হওয়ার তারিখ হতে ২ মাসের মধ্যে
কোথায়?
ঐ এলাকার এখতিয়ার/আদালতের নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য নিয়োজিত ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করতে হবে।
উল্লেখ্য যে জমি হতে বেদখল হওয়ার আশংকা থাকলেও আশংকার তারিখ হতে ২ মাসের মধ্যে ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে উপরোক্ত ধারায় মামলা করা যাবে।
দেওয়ানী আদালতে: (১৮৭৭ সালের সুনিদিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা মতে) যদি কোনো ব্যক্তি তার দখলকৃত জমি হতে হঠাত্‍ করে বেদখল হয়ে যান কিংবা কোনো ব্যক্তিকে জোড় পূর্বকভাবে বেদখল করা হয় তাহলে জমি হতে বেদখল হওয়া ব্যক্তি বেদখল হওয়ার পর দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে।
কতদিনের মধ্যে?
বেদখল হওয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে।
কোথায় মামলা করতে হবে?
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার সহকারী জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ২ লাখ ১ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার সিনিয়র সহকারী জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ৪ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার যুগ্ন জেলা জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ৫ লক্ষ ১ টাকা থেকে অসীম পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
উল্লেখ্য যে যদি কোনো ব্যক্তি তার দখলকৃত জমি হতে বেদখল হয়ে যায় এবং ঐ বেদখল হওয়া জমিটিতে তার মালিকানা থাকে তাহলে ঐ জমিটিতে দখল ফিরে পাবার জন্য বেদখল হওয়ার পর এখতিয়ার ভুক্ত দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। (১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ এবং ৪২ ধারা )
কতদিনের মধ্যে?
বেদখল হওয়ার তারিখ হতে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করতে
কোথায় মামলা করতে হবে?
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার সহকারী জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ২ লাখ ১ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার সিনিয়র সহকারী জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ৪ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার যুগ্ন জেলা জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ৫ লক্ষ ১ টাকা থেকে অসীম পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
মামলা করার পদ্ধতি:
যদি কোনো ব্যক্তি তার দখলে থাকা জমি হতে বেদখল হয়ে যায় কিংবা তাকে জোর পূর্বকভাবে তাকে বেদখল করা হয় তাহলে তিনি প্রথমে একজন এডভোকেটের কাছে গিয়ে জমি হতে বেদখলের ঘটনাটি সম্পূর্ণ খুলে বলবেন এবং ঘটনা শোনার পর বিজ্ঞ এডভোকেট সাহেব মামলা করার জন্য লিখিত আরজি প্রস্তুত করে তাকে পড়ে শোনাবেন এবং শোনার পর আরজির সাথে উপযুক্ত কোর্ট ফি সংযুক্ত করে বাদীর স্বাক্ষর করার নির্দিষ্ট স্থানে তথা আরজির উপরে ডান পাশ্বে স্বাক্ষর করে আদালতে দাখিল করতে হবে৷
মামলার পরিণতি:
জমি হতে বেদখল হওয়া ব্যক্তি যদি আদালতে মামলা করার পর তার জমি দখলে রাখার জন্য উপযুক্ত কারণ ও প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে জমি হতে বেদখল হওয়া ব্যক্তিটি তার বেদখল হওয়া জমিতে পুনরায় দখল ফেরত্‍ পাবেন এবং দখল প্রদানের নিশ্চয়তা আদালতই করে দিবেন ৷ যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হওয়া জমির মালিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে দখলের সাথে মালিকানা ঘোষণার জন্যও মামলা করতে হবে৷ যদি ঐ ব্যক্তি বেদখল হওয়া জমিতে তার সত্যিই মালিকানা আছে তা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আদালত বেদখল হওয়া জমিতে তার মালিকানার ঘোষণা সহ জমির দখল প্রদানের জন্য নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করবেন ৷
সাহায্যকারী সংগঠন:
"সমতা"
৯/৫, ইকবাল রোড, এ- ব্লক মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭৷
ফোন নম্বর-৯১৩১০৫৮৷
"জাতীয় আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা"
(প্রত্যেক জেলার জেলা জজ সাহেবের অফিস)
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ("ব্লাস্ট")
১৪১/১, সেগুন বাগিচা, ঢাকা-১০০০ ৷
ফোন নম্বর- ৮৩১৭১৮৫, ৯৩৪৯১২৬ ৷
"মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন"
নোতাম সাহার, মাদারীপুর ৷
ফোন নম্বর-০৬৬১-৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮ ৷
"নিজেরা করি" ৭/৮, ব্লক-সি, লালমাটিয়া, ঢাকা ৷
ফোন নম্বর-৮১২২১৯৯, ৯১৪৪০৮৫ ৷
এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভোলপমেন্ট ("এ.এল.আর.ডি.")
বাড়ী নং-৪০, রোড নং-৪/এ, ধানমন্ডি আ/ এ, ঢাকা-১২০৯ ৷
ফোন নম্বর-৯৬৬২৫০৩, ৯৬৭১১৭২ ৷
১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্সি আদেশ মোতাবেক সর্বোচ্চ সিলিং বা জমি দখলে রাখার সীমাদ্ধতা:
সিলিং: সিলিং কথাটির শাব্দিক অর্থ হলো সীমাবদ্ধতা বা সর্বোচ্চ সীমা। সিলিং শব্দটি জমি জমা সংক্রান্ত আইনেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৯০ ধারায় জমি জমা ভোগ দখলে রাখা কিংবা গ্রহণের ব্যাপারে সীমাবদ্ধতার কখা উল্লেখ করা হয়েছে যাকে আমরা আইনী ভাষায় সিলিং বলে থাকি। ১৯৭০ সালের পূর্বে তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে আইয়ুব খাঁ সরকারের আমলে পরিবার ভিত্তিক ভুমি সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা বা সিলিং এর পরিমাণ ছিল ৩৭৫ বিঘা। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৫/৮/১৯৭২ সালে জারিকৃত এবং তাত্ক্ষণিক ভাবে বলবত্কৃত বাংলাদেশ ল্যান্ড হোল্ডিং (লিমিটেশন) -১৯৭২ এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্সি আদেশ নং-৯৮/১৯৭২ এর ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন পরিবার বা সংস্থা সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা বা ৩৩.৩৩ একর পর্যন্ত জমি অর্জন এবং দখলে রাখতে পারবেন। উক্ত প্রেসিডেন্টের আদেশে আরো বলা হয়েছে যে যদি কোনো পরিবার বা সংস্থা অত্র আদেশ জারির পরে ১০০ বিঘার বেশি সম্পত্তি অর্জন করতে কিংবা দখলে রাখতে পারবেনা । যদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকে তাহলে সরকারের বরাবরে অতিরিক্ত জমিগুলি ছেড়ে দিতে হবে। এমন কি কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা সংস্থা ক্রয়, উত্তরাধিকার, দান বা হেবা বা অন্য কোনা উপায়ে ১০০ বিঘার বেশি জমি অর্জন করতে পারবেনা। তবে এই সিলিং বা সীমাবদ্ধতা ওয়াকফ, দেবোত্তর বা কোনো ধর্মীয় বা দাতব্য ট্রাস্টের ক্ষেত্রে প্রযোয্য হবেনা।
তবে উল্লেখ্য যে যদি কোনো ব্যক্তির নিকট ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকে এবং সেই ব্যক্তি যদি উক্ত জমি হতে আয়কৃত টাকার কিছু অংশ ব্যক্তিগত কাজে এবং কিছু অংশ ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে ধর্মীয় বা দাতব্য কাজের উদ্দেশ্যের সম্পুর্ণরুপে উত্সর্গকৃত আয়ের অংশটুকুই কেবলমাত্র সিলিং বা সীমাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবে।
তবে উক্ত প্রেসিডেন্সি আদেশ নং-৯৮/১৯৭২ এর ৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে সরকার যদি যোগ্য মনে করেন তাহলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জমি জমা অর্জন ও ভোগ দখলের সীমাবদ্ধতা মওকুফ (Relax) করতে পারেন।
ক্ষেত্রেগুলি হলো:
যদি কোনো কৃষক সমবায় সমিতি, তাদের সমিতির মাধ্যমে অর্জিত ভুমির স্বত্ত্ব (Title)উক্ত সমিতির নিকট সমার্পন করে এবং সংশ্লিষ্ট কৃষক সমিতিতে জড়িত কৃষকেরা নিজেরা ঐ জমি চাষাবাদ করেন।
যদি কোনো কৃষক চা, রাবার অথবা কফি চাষ অথবা ফলের বাগানের জন্য জমিগুলি ব্যবহার করেন।
কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান এর ফ্যাক্টরিতে পন্য দ্রব্য প্রস্তুত করার জন্য যদি কাঁচামাল উত্পাদন করার জন্য জমির প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে সরকার সিলিং বা জমিজমার সীমাবদ্ধতা মওকুফ করতে পারেন।
অথবা যেক্ষেত্রে সরকার জনস্বার্থের প্রয়োজনে সিলিং মওকুফ করা আবশ্যক বলে মনে করবেন সেক্ষেত্রে জমি অর্জন ও ভোগ দখলের সীমাবদ্ধতা বা সিলিং মওকুফ করতে পারবেন।
এছাড়াও জমি জমার সমস্যা সংক্রান্ত ব্যাপারে কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অসহায় গরীব মানুষকে সহযোগিতা করে থাকে ৷
১৯৮৪ সালের ভুমি সংস্কার অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভুমির সর্বোচ্চ সিলিং:
১লা বৈশাখ ১৩৯১ বাংলা সাল তথা ১৪/৪/১৯৮৪ইং তারিখের পূর্বে বাংলাদেশের কোনো পরিবার বা সংস্থা সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমি ক্রয়ের মাধ্যমে কিংবা দান, উত্তরাধিকার কিংবা অন্য কোনো উপায়ে অর্জন করতে পারত এবং ভোগ দখলে রাখতে পারত, কিন্তু সরকার ১৯৮৪ ইং সালের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ঘোষনা করেছেন যে, ১৪ই এপ্রিল ১ঌ৮৪ সাল তথা ১লা বৈশাখ ১৩৯১ বাংলা তারিখ থেকে কোনো মালিক পরিবার বা সংস্থা ৬০ বিঘার (২০ একর) অতিরিক্ত কোনো কৃষি জমি ক্রয় সুত্রে/ উত্তরাধিকার সুত্রে/দান বা হেবা কিংবা অন্য কোনো উপায়ে অর্জন করতে পারবেন না।
[১৯৮৪ সালের ভুমি সংস্কার অধ্যাদেশের ৪ নং ধারার ১ উপধারা]
অত্র অধ্যাদেশের ৪ নং ধারার ৩ উপধারাতে বলা হয়েছে যে এই অধ্যাদেশের কোনো বিধান লংঘন করে যদি কোনো মালিক বা পরিবার বা ব্যক্তি বা কোনো সংস্থা যে কোনো পদ্ধতিতে নতুন কৃষি জমি অর্জন করেন এবং পূর্বে এবং নতুন অর্জিত জমির পরিমাণ যদি ৬০ বিঘার অতিরিক্ত হয়ে যায় তাহলে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি সরকারের হাতে ন্যস্ত হয়ে যাবে। তবে উল্লেখ্য যে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি গুলি যদি উত্তরাধিকার, দান (হেবা) এর মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে তাহলে উক্ত অতিরিক্ত জমির জন্য সরকার জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিবেন।

Find us on Facebook

Categories